নামাজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ, যা মুসলমানদের জন্য দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এশার নামাজ দিন শেষে আদায় করতে হয় এবং এর রাকাত সংখ্যা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে। অনেকেই জানতে চান, কেন এশার নামাজ ১৭ রাকাত বলা হয় এবং এই ১৭ রাকাতের মধ্যে কোনটি ফরজ, কোনটি সুন্নত বা নফল। এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব এশার নামাজের রাকাত বিভাজন, ফজিলত এবং নামাজের সঠিক আদায় পদ্ধতি নিয়ে।
এশার নামাজের তাৎপর্য
রাতে আত্মিক প্রশান্তি অর্জনের উপায়
এশার নামাজ রাতের শেষ বাধ্যতামূলক নামাজ। এটি মুসলমানদের জন্য আত্মিক প্রশান্তি ও শুদ্ধতার পথ। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে নামাজে দাঁড়ানো মানে নিজেকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করা এবং দিনভর সকল ক্লান্তি থেকে মুক্তি লাভ। এই নামাজে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া যায়, এবং পরের দিনের জন্য রূহানী প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
হাদিসে এশার নামাজের গুরুত্ব
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতের সাথে আদায় করে, সে যেন অর্ধ রাত পর্যন্ত ইবাদত করল।” এ থেকে বোঝা যায়, এশার নামাজ কেবল ফরজ আদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা পূর্ণ রূপে আদায় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এশার নামাজ ১৭ রাকাত – কীভাবে বিভাজিত?
রাকাত সংখ্যা ও ধরণ
এখানে আমরা দেখে নেব, এশার নামাজ ১৭ রাকাত কীভাবে বিভক্ত হয় এবং কোন রাকাতের কী মর্যাদা ও নিয়ম:
চার রাকাত সুন্নত মোয়াক্কাদা – এটি রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত আদায় করতেন, তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। এ রাকাতগুলো এশার আগে বা পরে আদায় করা যায়, তবে আগে আদায় করাই উত্তম।
চার রাকাত ফরজ – এটি অবশ্যই জামাতের সাথে আদায় করা উচিত। ফরজ নামাজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ এবং না পড়লে গোনাহ হয়।
দুই রাকাত সুন্নত মোয়াক্কাদা – ফরজের পর আদায় করতে হয়। এটিও গুরুত্বসহকারে আদায় করা উত্তম।
দুই রাকাত নফল নামাজ – সুন্নতের পর পড়া যায়। এটি ঐচ্ছিক, তবে সওয়াবের জন্য উত্তম।
তিন রাকাত বিতর ওয়াজিব – এটি এশার নামাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিতর না পড়লে নামাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বিতর নামাজে বিশেষ দোয়া ও নিয়ম আছে, যা রাতের বিশেষ ইবাদতের অংশ।
দুই রাকাত নফল (বিতরের পর) – কেউ কেউ বিতরের পর আরও দুই রাকাত নফল আদায় করেন, যদিও এটি আবশ্যক নয়।
সময়সীমা ও আদায় পদ্ধতি
এশার নামাজ শুরু হয় মাগরিবের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে এবং চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে রাত গভীর হওয়ার আগেই নামাজ আদায় করা উত্তম। বিতর নামাজ কেউ চাইলে তাহাজ্জুদের পরেও আদায় করতে পারেন, তবে সে ক্ষেত্রে আগে নিয়ত করে রাখা ভালো।
এশার নামাজের প্রতিটি রাকাতের ফজিলত
সুন্নত রাকাতের ফজিলত
সুন্নত মোয়াক্কাদা নামাজ রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত আদায় করতেন। এটি না পড়া গোনাহ না হলেও, তা অবহেলা করা অনুচিত এবং নিয়মিত না পড়লে গোনাহে কবিরার আশঙ্কা থাকে।
বিতর নামাজের মর্যাদা
হাদিসে বিতর নামাজের গুরুত্ব নিয়ে বলা হয়েছে, “বিতর হল তোমাদের রাতের নামাজের সমাপ্তি।” এটি ওয়াজিব এবং কেউ যদি ভুলে যায় বা ছুটে যায়, তাহলে পরে কাযা করে নেওয়া আবশ্যক।
নামাজ শেখার জন্য নবীনদের জন্য টিপস
নামাজের নিয়ম শিখুন ধাপে ধাপে
যারা নতুন নামাজ শুরু করছেন বা নামাজে নিয়মিত হতে চান, তাদের উচিত প্রতিটি নামাজের রাকাত ও দোয়া ঠিকমতো শেখা। ধাপে ধাপে অভ্যাস গড়ে তুললে এশার ১৭ রাকাতও সহজ হয়ে যাবে।
মোবাইল অ্যাপ বা ভিডিও টিউটোরিয়ালের সাহায্য নিন
বর্তমানে অনেক ইসলামিক অ্যাপ রয়েছে যেখানে ভিডিও বা অডিওর মাধ্যমে এশার নামাজসহ সব নামাজ শেখানো হয়। এগুলো অনুসরণ করেও আপনি সঠিকভাবে নামাজ শিখতে পারেন।
অভিজ্ঞদের থেকে সাহায্য নিন
মসজিদের ইমাম বা পরিবারের বড়দের সাহায্য নেওয়া যায়। তারা শুদ্ধ উচ্চারণ ও নিয়ম শেখাতে পারবেন।
মুসলিম জীবনে এশার নামাজের প্রভাব
রাতের নামাজে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে
এশার নামাজ মানে সারাদিনের অবসরের পর আল্লাহর সঙ্গে একান্ত মুহূর্ত কাটানো। এ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা অন্য কোনো সময়ে সম্ভব হয় না।
পরিপূর্ণ নামাজে আত্মতৃপ্তি ও সুখ
১৭ রাকাত যদি নিয়ম করে আদায় করা যায়, তবে তাতে মন ও শরীর দুটোই শান্তি পায়। যাঁরা নিয়মিত এশার নামাজ আদায় করেন, তাঁরা জীবনের নানা বাধা-বিপত্তিতেও সাহসিকতা ও ধৈর্য অর্জন করেন।
উপসংহার
নামাজ মুসলমানদের জন্য আত্মার খোরাক। এশার নামাজ দিনে শেষ বাধ্যতামূলক নামাজ এবং এর মধ্যে রয়েছে সুন্নত, ফরজ, বিতর ও নফলের সমন্বয়। তাই প্রতিদিনের রুটিনে এ নামাজকে গুরুত্ব দিয়ে রাখা দরকার। নিয়মিত এবং একাগ্রভাবে আদায় করলে এ নামাজ আমাদের রূহানী শক্তি বৃদ্ধি করে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে। মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত প্রতিটি রাকাতের তাৎপর্য বুঝে, সঠিকভাবে এশার নামাজ ১৭ রাকাত আদায় করা। এতে যেমন দুনিয়ার শান্তি, তেমনি আখিরাতের মুক্তিও নিশ্চিত।